Advertisement
Google search engine

বিয়ের আগে বর-কনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো প্রয়োজন

বিয়ে একটি নতুন জীবনের সূচনা। দুটি মানুষ একসাথে পথ চলার অঙ্গীকার করে। এই পথচলা যেন সুস্থ ও সুন্দর হয়, তার জন্য বিয়ের আগে বর ও কনের কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো অপরিহার্য। এই পরীক্ষাগুলো কেবল তাদের নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে না, বরং তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং সামগ্রিক দাম্পত্য জীবনের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর প্রধান উদ্দেশ্য হলো, এমন কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা আছে কিনা তা আগে থেকে জেনে নেওয়া, যা পরবর্তীতে দাম্পত্য জীবনে বা সন্তানের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক সময় এমন কিছু রোগ থাকে যা বাহ্যিকভাবে বোঝা যায় না, কিন্তু সঠিক সময়ে শনাক্ত করা গেলে তার চিকিৎসা বা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

এখানে বর ও কনের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা উল্লেখ করা হলো:

১. রক্তের গ্রুপ ও আরএইচ ফ্যাক্টর (Blood Group and Rh Factor):

বিয়ের আগে বর ও কনের রক্তের গ্রুপ এবং আরএইচ ফ্যাক্টর জানা জরুরি। যদি মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হয় এবং সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হয়, সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। আগে থেকে এই বিষয়টি জানা থাকলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সতর্কতা অবলম্বন করা সম্ভব।

২. হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস (Hemoglobin Electrophoresis):

থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তরোগ। যদি বর ও কনে উভয়েই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তাহলে তাদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এই পরীক্ষাটি থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা তা জানতে সাহায্য করে এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়।

৩. যৌন সংক্রামক রোগ স্ক্রিনিং (Screening for Sexually Transmitted Infections – STIs):

কিছু যৌন সংক্রামক রোগ (যেমন – এইচআইভি, সিফিলিস, গনোরিয়া, ক্ল্যামিডিয়া) আপাতদৃষ্টিতে কোনো লক্ষণ না দেখালেও পরবর্তীতে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে এবং সঙ্গীর শরীরেও সংক্রমিত হতে পারে। বিয়ের আগে এই পরীক্ষাগুলো করানো পারস্পরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

৪. উর্বরতা পরীক্ষা (Fertility Tests – প্রয়োজনে):

যদি কোনো কারণে বর বা কনের উর্বরতা নিয়ে কোনো সন্দেহ বা জিজ্ঞাসা থাকে, তাহলে বিয়ের আগে উর্বরতা পরীক্ষা করানো যেতে পারে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রজনন ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব।

৫. ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা (Tests for Diabetes and Hypertension):

ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো chronic রোগ বর্তমানে অনেক মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। বিয়ের আগে এই রোগগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এছাড়াও, গর্ভাবস্থায় এই রোগগুলো মায়ের ও সন্তানের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার গুরুত্ব:

বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো কেবল রোগের শনাক্তকরণের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি একটি দায়িত্বশীল পদক্ষেপ। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বর ও কনে একে অপরের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অবগত থাকতে পারেন এবং ভবিষ্যতের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা ধরা পড়লে দুজনে মিলে সেই সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারেন এবং একে অপরের প্রতি আরও বেশি সহানুভূতিশীল হতে পারেন।

পরিশেষে বলা যায়, একটি সুস্থ ও সুখী দাম্পত্য জীবনের ভিত্তি রচিত হয় পারস্পরিক বোঝাপড়া ও স্বাস্থ্যের ওপর। বিয়ের আগে এই সামান্য কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো কেবল নিজেদের জন্যই নয়, বরং একটি সুস্থ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও অপরিহার্য। তাই, বিবাহের পূর্বে স্বাস্থ্য পরীক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করা এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

Google search engine

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here