Advertisement
Google search engine

ইসলামে সবচেয়ে অপছন্দের বৈধ বিষয় তালাক। সংসার ভাঙাকে পছন্দ করে না ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবে তালাক ইসলামে পছন্দনীয় নয়। তবে নিরুপায় অবস্থায় তালাক দেয়ার অনুমতি দিয়েছে ইসলাম।
প্রাথমিকভাবে যার কারণে তালাক দেয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, তাকে বুঝানো, নিজের বুঝানোর মাধ্যমে কাজ না হলে, পরিবারের মাধ্যমে বুঝানো, মুরব্বিদের মাধ্যমে বুঝানো। তারপরও যদি ঠিক না হয়। তাহলে ইসলামি শরিয়ত এক তালাক দেয়ার অনুমতি প্রদান করে।

এক তালাক দিলে যদি সে ঠিক হয়ে যায়, তার সঙ্গে ঘর সংসার করার অনুমতি রয়েছে। দুই তালাক দিলে, মীমাংসা করে ফের বিয়ে করতে পারবে। তবে তিন তালাক দিয়ে দিলে ফের বিয়ে করলেও হবে না। তাকে ফিরিয়ে নেয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।

এগুলো স্বাভাবিক নিয়ম। আর স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেয়ার জন্য জরুরি হল, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার দেয়া। যদি তালাকের অধিকার স্বামী স্ত্রীকে না দিয়ে থাকে, তাহলে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারবে না। অধিকার বা ইজন এটা বিয়ের সময় দেয়া হয়।

স্বামীর পক্ষ থেকে যে তালাক দেয়া হয় সেটাকে তালাক বলা হয়। আর স্ত্রীর পক্ষ থেকে কাজি বা উনার স্থলাভিষিক্ত কারো নিকট তালাক চাওয়ার ভিত্তিতে মালের বিনিময়ে যে বিবাহ বিচ্ছেদ করা হয়, তাকে খুলা তালাক বলে।

যেমন ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে, খুলা (বা তার সমার্থক) শব্দাবলি দ্বারা মালের বিনিময়ে বিবাহ বিচ্ছেদ করাকে খুলা বলে। খুলা ‘ক্রয়-বিক্রয়’ শব্দ দ্বারাও সংগঠিত হতে পারবে। কখনো ফারসি শব্দাবলি দ্বারাও সংগঠিত হবে। (যাহিরিয়্যাহ)

খুলার হুকুম হলো, খুলা করার মাধ্যমে তালাকে বায়িন পতিত হয়। সাধারণত এক তালাকে বাইনই পতিত হবে, তবে তাতে তিন তালাকের নিয়্যাত ও বিশুদ্ধ হবে। বাইন মানে যে তালাকের পর দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে হয় নতুন মোহরানা নির্ধারণ করে।

যদি কেউ কোনো মহিলাকে বারবার বিয়ে করে। প্রত্যেকবারই বিয়ের করার পর খুলা করে নেয়। তাহলে ঐ স্বামীর জন্য উক্ত খুলাকৃত স্ত্রীকে তিনবার খুলার পর আর বিয়ে করতে পারবে না।

হ্যাঁ তিনবার খুলা করার পর যদি উক্ত স্ত্রী অন্য স্বামীকে গ্রহণ করে অতঃপর ঐ দ্বিতীয় স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়,তাহলে ঐ মহিলা জন্য দ্বিতীয়বার প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েজ। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/৪৮৮)

অনুরূপ যদি স্বামী তিন প্রথমবার খুলা করার সময় তিন তালাকের নিয়্যাত করে তাহলে তিন তালাকে বাইনই পতিত হবে। খুলা করার পর ইদ্দতের ভিতর বা বাহির যেকোনো সময় স্বামীর জন্য ঐ খুলাকৃত স্ত্রীকে আবার বিয়ে করা যায়েয।তবে এক্ষেত্র নতুন মহর এবং দুই সাক্ষী থাকা শর্ত।

বর্তমানে কাবিননামায় স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেয়ার অধিকার দিয়ে দেয়া হয়। সে হিসেবে স্ত্রীও স্বামীকে তালাক দিতে পারে নৈতিক কারণে। স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার দিয়ে থাকে, তাহলে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেয়ার জন্য স্বামীর মঞ্জুরী জরুরি নয়। স্বামীর দেয়া অধিকার বলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করে আলাদা হয়ে যেতে পারবে।

কিন্তু স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার না দিয়ে থাকে, তাহলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করতে পারবে না। তবে এক্ষেত্রে স্ত্রী নিজের উপর তালাক নেয়ার জন্য স্বামীর সাথে খুলা তালাকের চুক্তি করতে পারে। সেটি হল, অর্থের বিনিময়ে বা মোহর মাফ করিয়ে নেবার বিনিময়ে স্বামীর কাছ থেকে তালাক নিয়ে নেয়া।

উপর্যুক্ত বক্তব্যের আলোকে আপনি নিজেই নির্ধারিত করে নিতে পারবেন উক্ত মহিলার এখন কী করা উচিত। যদি স্বামীর সাথে থাকা সম্ভব হয়, বা স্বামীকে বুঝিয়ে ভাল পথে নিয়ে আসা সম্ভব হয়, তাহলে তালাকের পথে না যাওয়াই হবে উত্তম কাজ। তারপরও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে উপর্যুক্ত মূলনীতির আলোকে মহিলা নিজের জন্য উপযুক্ত অবস্থান আরোপ করতে পারবে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে বলেন, আর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, তারা উভয়ে আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করতে পারবে না, তবে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে নিষ্কৃতি পেতে চায় তাহলে উভয়ের মধ্যে কারো কোন অপরাধ নেই। (সুরা বাকারা-২২৯)

স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাক দেয়ার বিধান

খোলা তালাকের কারণে এক তালাক বায়িন সাব্যস্ত হয়। হাদিস শরিফে এসেছে, عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ جَعَلَ الْخُلْعَ تَطْلِيقَةً بَائِنَةً ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রসুল সা. খুলাকে এক তালাকে বায়িন সাব্যস্ত করেছেন। (সুনানে দারাকুতনি ৪০২৫, মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা ১৮৪৪৮ আসসুনানুল কুবরা লিলবায়হাকি ১৪৮৬৫)

সুতরাং খোলা তালাকের পর স্বামী-স্ত্রী যদি পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চান এবং তালাকনামায় যদি তিন তালাকের উল্লেখ না থাকে; বরং এক তালাক কিংবা দুই তালাকের উল্লেখ থাকে তাহলে নতুন মোহরের সঙ্গে নতুন করে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন। (কিতাবুল ফাতাওয়া ৫/১২৯, ১৩০)

আর যদি উক্ত তালাকনামায় তিন তালাকের উল্লেখ থাকে তাহলে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পুনরায় একসাথে বসবাস করতে চাইলে স্ত্রীর ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর অন্যত্র তার বিয়ে হতে হবে এবং সে স্বামীর সাথে মিলন হওয়া অপরিহার্য। এরপর কোনো কারণে সে তালাক দিলে কিংবা তার মৃত্যু হলে ইদ্দত পালনের পর দু’জন পরস্পর সম্মত হলে নতুন করে নতুন মোহরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন। (সূরা বাকারা-২৩০)

স্ত্রীর অন্যায়ের কারণে খোলা তালাক

স্ত্রীর অন্যায়ের কারণে খোলা তালাক হলে স্বামী পূর্ণ মোহর বা মহরের অংশ বিশেষ ফেরত নেওয়ার কিংবা না দেওয়ার শর্ত করতে পারে। কিন্তু মহরের চেয়ে বেশি দাবি করা অনুচিত। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার মহর যেহেতু আড়াই লাখ ছিল তাই খোলা তালাক দেওয়ার সময় আড়াই লাখ বা তার কম অর্থের শর্ত করতে পারবেন। অবশ্য আপনার স্ত্রী যদি নিজ থেকে আপনাকে অতিরিক্ত টাকা দিতে চায় তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি তা গ্রহণ করতে পারবেন।

তালাক পতিত হওয়ার জন্য কি সাক্ষীর উপস্থিতি জরুরি?

অনেকের ধারণা, স্বামী তালাকের সময় কোনো সাক্ষী না রাখলে তালাক পতিত হয় না। এটাও মানুষের মনগড়া মাসআলা। সাক্ষীর প্রয়োজন তো হয় বিবাহের সময়। তালাক পতিত হওয়ার জন্য এক বা একাধিক কোনো সাক্ষীরই প্রয়োজন নেই। স্বামী যদি রাতের অন্ধকারে একা একা বসে তালাক দেয় তাহলেও তালাক হয়ে যায়।

 

গর্ভাবস্থায় তালাক দিলে কি তালাক পতিত হয় না?

অনেকে এই মাসআলা বানিয়ে রেখেছে যে, গর্ভাবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়া হলে তা কার্যকর হয় না। এটিও সম্পূর্ণ অবাস্তব কথা। গর্ভাবস্থায় হোক বা অন্য যেকোনো অবস্থাই হোক তালাক দেয়া হলে তা পতিত হয়ে যায়। এজন্য সঠিক মাসআলা শেখা সকলের দায়িত্ব। অজ্ঞতার ধোঁকায় থাকার কারণে হারাম কখনো হালাল হতে পারে না।

Google search engine

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here